করোনা নিয়ে জামান তুহিনের ভাবনা

সত্যি করে বললে, বৈশ্বিক মহামারী এবং মহামারী কালে করনীয় কী? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের আমাদের কারো কাছেই নেই। কারন  এর আগে এইরকম  মহামারীর সাক্ষী গোটা দুনিয়ায় যারা হয়েছেন, তাঁরা হয়তো কেউই আর পৃথিবীতে নেই। প্রযুক্তির এই যুগেও, আমরা স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় কতটা যে পিছিয়ে রয়েছি, এই কোভিড-১৯ একেবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। 
“কোভিড-১৯” প্রাকৃতিক ভাবেই এসেছে নাকি ল্যাবরেটরিতে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা বিশ্ব নেতাদের নানা মত নাহয় আমরা আলাদা করেই রাখলাম। আমরা শুধু দেখে যাই যে, মানবজাতি আজ কতটা অসহায় হয়ে পরেছে। 
চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে পর্যন্ত ক্ষমতাধর দেশগুলো কত দিশেহারা! সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশ, দেশের নীতিনির্ধারকরা এবং সাধারণ জনগন একটু যে দিশেহারা হবে না, সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনোই বিশ্বাস করিনি। 
হবার ই কথা, আমাদের দেশে “ডেঙ্গু” ই পারলে মহামারী আকার ধারন করে বসে প্রায়ই। শুধু কি অব্যবস্থাপনার দোষ দিবো? নাকি অদক্ষতা? নাকি সিদ্ধান্ত নেয়ার ভুল?  সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি হয় পারি সবগুলোকেই দোষ দিতে, অথবা সবকিছুকেই মেনে নিতে। মজার কথা হল, আমি দুটোর একটিও করছি না। বিগত একমাসের বেশি সময় ধরে দেশের প্রায় সব জনগন ই “কোভিড-১৯” নিয়ে প্যানিক হয়ে গেছে অথবা কেউ কেউ এটার ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছুই জানেনা। 
গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবন নিয়ে তো প্রায় একটা উপহাসই করা হয়ে গেল। জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় যখন বিগত ২৫ মার্চ সাধারণ ছুটির ঘোষনা দিলো। লোকজন ছুটি পেয়ে, বেড়াতে চলে গেল। বেড়াতে যাওয়ার পর, গনপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হল। কিন্ত এপ্রিলের ৪ তারিখে পোশাকশিল্প মালিকগন বুঝতে পারলোনা যে কি করবে বা বলবে? বিশ্বাস করুন একটা ক্ষুদ্র পরিসরের প্রতিষ্ঠানেও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য এই অল্প সময়ে প্রস্ততি নেওয়াও সম্ভব নয়।  সম্ভবত ঘটনাটা সেখানেই ঘটে গেসে, মানে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। এরপর আর বলার কিছু বাকি থাকেনা, এরা আবার ফেরত গেল এবং ব্যাপারটা ছড়িয়ে পরলো। 
কিছু কিছু থেকে গেল, কারখানা খোলা ছিলো তাই। কেউ নামেমাত্র মাস্ক, পিপিই বানাচ্ছিলো। কেউ হাতের কাজগুলো শেষ করলো। “কোভিড-১৯” কিন্ত ছড়াতেই থাকলো।  মানুষ ক্ষুধায় রাস্তায় নামলো। গভমেন্ট শুধুমাত্র পোশাক শিল্পের জন্য প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করলো। ৫ এপ্রিল থেকে, বহু ফ্যাক্টরি লে-অফ ঘোষনা করলো। কারন, ওইযে বললাম এই ধরনের পরিস্থিতির অভিজ্ঞতাই তো নেই সবার। এর উপর এই বৃহৎ শিল্পের মালিকেরা কেবলমাত্র অডিট পাশ করার জন্যই লোক নিয়োগ দেয়, পর্যাপ্ত জ্ঞ্যান এবং আইনের যারা চর্চা করে তাঁরা কতটুকুই বা স্থান পায়, সেটা মালিকগন খুব ভালো করেই জানেন। 
যাই হোক এবার আজকে পর্যন্ত চলছে ধোঁয়াশা। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, লে-অফ থাকছেনা। বোনাস নিয়ে মিটিং পরে। কিন্ত প্যাঁচ অন্য জায়গায়। যেই শ্রমিকগন কাজ করেছে তাঁরা এবং যারা করেননি তাঁরা এদের বেতন ভাতার শতাংশের হার নির্ধারণ কিভাবে এবং কতটা যুক্তিসঙ্গত ভাবে করা হল, সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার হিসেবে মিলছেনা। আর মিলছেনা, এই শ্রমিকগনের বাইরে এই প্যান্ডেমিকে শুধুমাত্র সরকারী প্রনোদনা প্যাকেজ পাওয়ার জন্য যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে নিরলস কাজ করে, তফশিলি ব্যাঙ্কগুলোতে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তাদের বেতন, চাকরি, কিংবা জীবনের নিশ্চয়তা বলতে যা কিছু আছে সেটা শ্রমিক ইউনিয়ন, বিজিএমিএ, কিংবা শ্রম মন্ত্রনালয় এর কারো চোখেই পরেনি। 
এরা মালিক নন, শ্রমিক নন, এরা যে আসলে কি, সংবিধান এর কোন সংজ্ঞায় এদের পাওয়া যায়না। কোন তফশিলে এদের পদবীর নাম পাওয়া যায়না।  অথচ আমার কাছে ছবি আসতো, প্রতিদিন শুধু স্বাক্ষর করা কাগজ সংগ্রহের জন্য কিছু কিছু লোক হাজার লোকের ভীরে ঠিকই দাঁড়িয়ে থাকতো। 
এদের নাম আমি দিয়েছি “শিক্ষিত গোলাম”। যারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে পারেনা, কার কাছে চাইতে পারেনা। মালিক যদি বলে এখন ৬০% বেতন, এরা প্রতিবাদ ও করতে পারবে না। অথচ এরা এখনও মালিকের হুকুমে, ত্রান দিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন যায়গায়। হয়তো এসব কারনেই অনেকে, বিবেক জলাঞ্জলি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাথে বেঈমানি করতে বাধ্য ও হয়। 
আমাদের এই ছোট্ট দেশটার হয়তো এখন সবাই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্ত আমি ভাবছি অন্য কথা। রেমিটেন্স তো শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। গার্মেন্টস শিল্প কি হবে জানিনা। কারন যাদের জন্য কাপড় আমরা সেলাতাম, তারাই এখন নিজ নিজ সরকারের অনুদানে চলছে। 
তবে আমাদের আছে উর্বর জমি। আমি একজন প্রফেশনাল হিসেবে আপাতত একটি খাদ্যে স্বনির্ভর জাতী দেখতে চাই। ত্রুনেরা পারে, তাদের চোখে মুখে স্বপ্ন। তরুনদের কাছে অনুরোধ, সুযোগ কেউ করে দিবেনা। নিজেদের করে নিতে হবে। এই যে সামনে বেকারত্ব আসছে, এটাকে সামাল দিতে হবে।  আসুন যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসি।

জামান তুহিন, ঢাকা।